• Breaking News

    কাশীনাথ ভট্টাচার্য : সোনি-এসকেদা নেই, ডার্বি এখন সপ্তম-অষ্টমের লড়াই!



     সোনি নর্দে খেলবেন না। এনরিকে এসকেদাও নেই। ইস্টবেঙ্গলের বিশ্বকাপার জনি আকোস্তার প্রথম দলে থাকা নিয়ে সংশয়, নতুন বিদেশি খাইমে কোলাদো ‘কিছু মিনিট খেলতে পারেন’। পিন্টু মাহাতোরও চোট, খেলার সম্ভাবনা কম। চুম্বকে আই লিগের প্রথম ডার্বি!
    রবিবার বিকেলে বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এবারের আই লিগে কলকাতা ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আসলে লিগ তালিকায় সপ্তম বনাম অষ্টমের লড়াই! বহু প্রতীক্ষিত এই ম্যাচ যারা জিতবে পয়েন্ট হবে ১২। বড়জোর পঞ্চম স্থানে উঠে আসা সম্ভব। তাতেও, শীর্ষে-থাকা চেন্নাই সিটি-র (১৭) সঙ্গে পয়েন্টের পার্থক্য থাকবে পাঁচ। চাপে ফেলার সম্ভাবনাই নেই কোনও!
    শনিবার সকালে দুই কোচের সাংবাদিক সম্মেলনেও সেই ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা কুল-কুল মেজাজ। দুবার দুই সাংবাদিকের চেয়ার ভেঙে পড়ে যাওয়া ছাড়া যেখানে উত্তেজনার লেশমাত্র নেই। নেই বাণীরূপ অগ্নিবর্ষণ। মোহনবাগানের কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী এসেই জানিয়ে দিলেন, ‘বিপক্ষের কোচ অনেক এগিয়ে। রেয়াল মাদ্রিদের আকাদেমির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমন কিছু যা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। তাঁর সম্পর্কে আমি কী-ই বা বলতে পারি!  উনি অনেক এগিয়ে।’
    শুনে আলেখান্দ্রো, ‘শুনে ভাল লাগল বিপক্ষের কোচ আমার সম্মানে এত কথা বলেছেন। ওকেও আমার আন্তরিক অভিনন্দন।’
    এরপর মহারণের মেজাজ আর কোথায়ই বা খুঁজতে যাবেন!
    সকালে সাংবাদিক সম্মেলনের সময় ষষ্ঠ আর অষ্টম স্থানে ছিল দুই দল। সন্ধেয় গোকুলম ১০ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এল সপ্তম স্থানে। শঙ্করলালের অবশ্য মনে হচ্ছে না, তাতে কিছু যাবে-আসবে। ‘বাংলার ফুটবলের অবনতির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই এই অবস্থানের। আমরা যা খেলেছি তাতে আমাদের আরও ওপরে থাকাই উচিত ছিল। যে কোনও কারণেই হোক, হয়নি।’ সেই কারণগুলো খুঁজে বের করে সমাধানের চেষ্টাই কোচের কাজ, তাঁর মত।
    ইস্টবেঙ্গল-কোচও একইভাবে ভাবতে রাজি নন কে আছেন আর কে নেই। এসকেদার চোট নিয়ে পরিষ্কার বললেন, ‘এসকেদা কয়েকটা গোল করেছে, থাকলে ভাল হত। কিন্তু, এখন সমস্যাটা নিয়ে ভাবার সময় নয়। খুঁজতে হবে সমাধান।’ তাঁর দলের বিশ্বকাপার জনি আকোস্তা কি খেলবেন? তাঁকে ছাড়া শেষ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ জমাট। সালাম রঞ্জন আর বোরখার জুটি নিরাপত্তা দিয়েছে যেমন, মাঝমাঠে কাসিম আইদারার উপস্থিতিও সাহায্য করেছিল রক্ষণকে। কাসিম শুরুর ম্যাচগুলোয় সুযোগ পাচ্ছিলেন না প্রথম দলে। কী করে কোচের বিশ্বাস অর্জন করলেন, প্রশ্নেও ঘাবড়াননি। ‘লিগে দল নির্বাচন হয় রোটেশন মেনে। তাই এর সঙ্গে কোচের আস্থা অর্জনের সম্পর্ক নেই।’
    সোনির অনুপস্থিতি কি মানসিক দিক দিয়েও পিছিয়ে দেবে মোহনবাগানকে? কোচ শঙ্করলাল মানতে নারাজ। ‘সোনি অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। কিন্তু, সোনিকে ছাড়াও মোহনবাগান জিতেছে। কোচ হিসাবে আমি দলের সব ফুটবলারকেই একই চোখে দেখি। যে খেলবে ওর জায়গায় তাকে প্রমাণ করতে হবে।’ কাসিম, যাঁর কাঁধে পড়তে পারত সোনিকে আটকানোর ভার, অকপট, ‘ফুটবল এগারজনের বিরুদ্ধে এগারজনের খেলা। সোনি থাকবে না, কিন্তু ওর জায়গায় যে খেলবে তাকেও তো আটকাতে হবে, সেটাই তো কাজ।’
    মাঝে প্রায় দিন পনের খেলেনি মোহনবাগান। ‘সুবিধা হয়, কিছু ফুটবলার যাদের ছোট ছোট চোট ছিল, সেরে উঠতে পারল। আবার, অসুবিধাও। ছন্দটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। লিগ আসলে এমনই, এভাবেই এগিয়ে যেতে হয়।’ ইস্টবেঙ্গল আবার এই সময়ে দুটি ম্যাচ খেলে একটিতে হেরে শেষ ম্যাচ জিতেছে বড় ব্যবধানে। জয়ী দল কেনই বা পাল্টাতে যাবেন স্পেনীয় কোচ? যদিও আলেখান্দ্রো ঝেড়ে কাশলেন না! ‘দল কী হবে, কারা খেলবে, প্লেয়াররা জানে, আমিও জানি। কিন্তু সেটা মিডিয়াকে জানানোর সময় এখন নয়।’
    সেই গোপনীয়তা যা তিনি ‘ক্লোজড-ডোর’ অনুশীলনে তুলে ধরেছিলেন।  কিন্তু, এই দু-তিনদিনে কৌশলগত পরিবর্তন সম্ভব কালো কাপড়ে গ্যালারি ঢেকে অনুশীলন করলেই? শঙ্করলাল মনে করছেন, ‘ক্লোজড-ডোরে সাধারণত সেট পিস অনুশীলন হয়। আমরা করিনি কারণ আমাদের ওগুলো সাজঘরে ক্লাসে দেখিয়ে দেওয়া হয়। বিপক্ষের কে কোথায় কীভাবে দাঁড়াবে কীভাবে এগোবে – এগুলো ক্লাসে বলে দেওয়া হয়েছে। দরকার পড়েনি তাই দরজা বন্ধ রেখে অনুশীলনের।’
    তা হলে, কে এগিয়ে কে পিছিয়ে? কোচরা পঞ্চাশ-পঞ্চাশ তত্ত্বে বিশ্বাসী। ‘এল ক্লাসিকো’-র আঁচে পুড়ে-আসা কোচ যেমন জানেন বড় ম্যাচ কোন স্তরে পৌঁছতে পারে, কলকাতা-ক্লাসিকোয় খেলা এবং কোচের আসনে বসার অভিজ্ঞতায় বাঙালি কোচও পিছিয়ে থাকবেন না কোনওভাবেই। আগের সাতটা কলকাতা-ডার্বিতে হারেননি শঙ্কর, তথ্য হিসাবে যা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, প্রতিটি ডার্বিই যে নতুন! আগের ৩৪৭ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ১২৫-১০৯ ফলে ইস্টবেঙ্গলের এগিয়ে থাকার গুরুত্ব পরিসংখ্যান ছাড়া আর কোথায়!
    ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান (ইস্টবেঙ্গলের হোম ম্যাচ) ঘিরে বাঙালির জেগে-ওঠাও তাই চলছে চলবে। যুবভারতী ভরে যাওয়ার সম্ভাবনা। ষাট হাজার মানুষ উপস্থিত থাকবেন, আশা সংগঠকদের। ছুটির বিকেল, শীতের আগমনী বাতাস গায়ে মেখে, সোয়েটার-জ্যাকেটের ধুলো ঝেড়ে, ফুটবল নিয়ে গর্জে ওঠার সন্ধে আবার।
    আগুন খুঁজতে চাইলে বেশি দূর যেতে হবে না অবশ্য। অধুনা যা সামাজিক ব্যধি সেই সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেই পাবেন। হোয়াটস্যাপ, ফেসবুকে একের পর এক গ্রুপ। নানা রকমের ‘বনাম’ গ্রুপ, নানা নামে। চূড়ান্ত গালিগালাজ-খেস্তাখেস্তির মাঝে সেখানেও কিছু পঙ্কজ। লিউকোমিয়ায় সদ্য প্রয়াত ইস্টবেঙ্গল-সদস্যা উষশ্রী চক্রবর্তীর জন্য মোহনবাগান সমর্থকের আবেগের বহিঃপ্রকাশ  - পরের জন্মেও বোন তুই যেন ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতেই থাকিস...
    এভাবে তো এগিয়ে চলে ডার্বির সজল ইতিহাস!

    No comments