• Breaking News

    বিশ্বকাপ আনন্দযজ্ঞে ১৯/‌ কেলেঙ্কারি, তবু বিশ্বসেরা ইতালি /‌ কাশীনাথ ভট্টাচার্য


    হিটলারের বিশ্বযুদ্ধসঙ্কুল জার্মানিতে ফুটবলের বিশ্বকাপ হয়নি। ১৯৭৪–এ হয়েছিল, পশ্চিম জার্মানিতে, মিউনিখ দুর্ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত। পূর্ব–পশ্চিম ভেদাভেদ ভুলে জার্মানি দু’দেশের মাঝের দেওয়াল ভেঙে দিয়েছে, যদিও অন্তঃসলিলা ফল্গুর মতোই থেকে গিয়েছে দুই জার্মানির বিরোধের কাহিনী। কিন্তু, ফিফার পক্ষে কাজটা সহজই ছিল, জার্মানিকে বিশ্বকাপের দায়িত্ব দেওয়া। বিশ্বকাপে সবথেকে সফল তালিকায় তখন দ্বিতীয় স্থানে, ব্রাজিলের পাঁচ বিশ্বজয়ী খেতাবের পাশে জার্মানির তিন। ইতালির ঘরেও তখন বিশ্বকাপ তিনবার, পরে পেরিয়ে যায়, জার্মানিতেই। মেশিনের জয়গান, অটোমোবাইলের জয়গান গায় যে–দেশ, ফুটবলে তার ছাপ পড়বে না, এমনও আবার হয় না কি?

    সাফল্য পেয়েছে, কিন্তু বিশ্বকাপকে জার্মানি (‌প্রধানত পশ্চিমই, পূর্ব সেই সুযোগই পায়নি)‌ যেভাবে কলুষিত করে এসেছে, অন্য কোনও দেশ করেনি, ইতিহাস সাক্ষী। সেই ১৯৫৪ থেকে শুরু। হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের ম্যাচে নিজেদের রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের নামানো, হারার উদ্দেশ্যে নয়, পুসকাসকে মেরে প্রতিযোগিতার বাইরে পাঠাতে চেয়ে। এবং সফল! পুসকাস ফাইনালের আগে আর মাঠে নামতেই পারেননি, ফাইনালেও নেমেছিলেন জোর করেই, জিততে পারেননি। ২০ বছর পর নিজেদের দেশে ০–১ হেরে গিয়ে পূর্ব জার্মানিকে জেনেবুঝে হল্যান্ড–ব্রাজিল–আর্জেন্তিনার গ্রুপে পাঠিয়ে নিজেরা চুপিসারে সহজ গ্রুপ থেকে সরাসরি ফাইনালে! বিরাশিতে তো নোংরামির চূড়ান্ত। আলজেরিয়ার দোষ ছিল, গ্রুপের প্রথম ম্যাচে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে দিয়েছিল ২–১। সুতরাং, জার্মান–জাত্যভিমান জাগ্রত দ্বারে! পড়শি অস্ট্রিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা হয়ে গেল। পশ্চিম জার্মানি ১–০ জিতলে সঙ্গে অস্ট্রিয়াকেও নিয়ে যাওয়া যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। গটআপ খেলে জিতে আলজেরিয়াকে বিশ্বকাপ থেকে বাড়ি পাঠানো হল। আফ্রিকাকে এভাবে হারানোর সুযোগ পেলে শ্বেতাঙ্গরা কোনও কালেই পিছপা হয়নি, জার্মান–অস্ট্রীয়রা কী করে ব্যতিক্রম হবেন! সেই বিরাশিতেই ফ্রান্সকে সেমিফাইনালে হারাতে পশ্চিম জার্মানির গোলরক্ষক টনি শুমাখার ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ফরাসি বাতিস্তঁর শরীরে, দাঁত ফেলে দিয়েছিলেন দুটো, ডাচ রেফারি কর্ভার নাকি দেখতেই পাননি! এমনিতে দ্বিতীয় পর্বেই যেতে পারে না যে–দল নিজ দক্ষতায় অস্ট্রিয়াকে না–হারিয়ে, খেলেছিল ফাইনালে! নব্বইতে সেই বেকেনবাওয়ারই আবার ফোলারকে দিয়ে রাইকার্ডকে উত্তেজিত করিয়ে দুজনকেই লাল কার্ড দেখতে বাধ্য করে হল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে বের করে দেন। এর গালভরা নামই ‘কৌশল’, উত্তর ইউরোপ যা বরাবর করে এসেছে। ১৯৬৬–তে ইংল্যান্ড নিজেদের দেশে বিশ্বকাপের আসর বসানোর সুযোগ পেয়ে ইংরেজ আর জার্মান রেফারিদের দিয়ে পালা করে ব্রাজিল–আর্জেন্তিনা–উরুগুয়ের ম্যাচ খেলিয়েছিল এবং তেমন প্রতিটি ম্যাচের প্রায় সব সিদ্ধান্তই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আলাদা করে উল্লেখের দরকার পড়েনি। একই সুযোগ পেয়ে ১৯৭৮–এ আর্জেন্তিনাও যা–যা করেছিল, চরম লজ্জাজনক। কিন্তু, জার্মানির মতো বারবার কোনও দেশ করে চলেনি ধারাবাহিকভাবে। তাই জার্মানি বিশ্বকাপে ফুটবলকে পাশে সরিয়ে উঠে আসবে মাঠে ফুটবলারদের নাটকীয় পারফরমেন্সগুলো, এমন কিছু আশা করাই যেত বোধহয়। বিশ্বকাপ শেষ হবে জিনেদিন জিদানের ঢুঁসোয়, মার্কো মাতেরাজ্জির বুকে, যে–মাতেরাজ্জি অনবরত জিদানের মা–বউ–বোনকে অশ্রাব্য গালাগাল করে গিয়েছিলেন এমন কিছুর আশাতেই, তাতেই বা আশ্চর্য কী? বেকেনবাওয়ার ইতালির কোচ থাকলে তো নিশ্চিতভাবেই এই আচরণের জন্য আলাদা করে পুরস্কৃত করতেন মাতেরাজ্জিকে, জনান্তিকে অবশ্যই!

    জুলাই ২০০৬ সংখ্যার সম্পাদকীয়–তে ওয়ার্ল্ড সকার পত্রিকার সম্পাদক গ্যাভিন হ্যামিল্টন লিখেছিলেন, ‘we did witness an alarming rise in diving and feigning injury.’ এবং আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, ‘Blatter and FIFA have the power to act before diving and cheating become the acceptable norm rather than the unpleasant exception.’ দ্রোগবা–ক্রিস্তিয়ানো–নিস্টেলরুইরা তত দিনে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ‘নাটুকেপনা’–য়। জার্মানি বিশ্বকাপ নিয়ে এল টরস্টেন ফ্রিঞ্জ, ফাবিও গ্রোসো এবং থিয়েরি অঁরিদের, পাদপ্রদীপের ‘নাটুকে’ আলোয়!
    প্রাথমিক পর্ব
    আয়োজকরা কিন্তু অন্যতম ফেবারিট ছিল না নিজেদের দেশে। ফুটবলার হিসেবে ক্লিন্সম্যান যতই ভরসা দিয়ে থাকুন পশ্চিম বা গোটা জার্মানিকে, কোচ ক্লিন্সম্যানে আস্থা ছিল না জার্মানদের। দায়িত্ব নেওয়ার পরও জার্মানিতে থাকতে আসেননি, ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ি থেকেই আসতেন, যা নিয়ে ঘোরতর আপত্তি ছিল। আয়োজকদের যেহেতু খেলতে হয় না বাছাইপর্বে, খুব বেশি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচও খেলতে পারেনি। উল্টে ইতালির কাছে হেরেছিল ১–৪, প্রীতি ম্যাচে। তাই খুব বেশি আশা করতেও ভয় পাচ্ছিলেন জার্মানরা। কিন্তু, ক্লিন্সম্যানের জার্মানি পরপর তিনটি ম্যাচই জিতে শুরু করায় আশা ফিরেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, গ্রুপে এই তিনটি জয়ই — কোস্টারিকা, পোল্যান্ড ও ইকুয়েদরের বিরুদ্ধে — সম্পূর্ণ বিতর্কহীন। ক্লিন্সম্যানের অধীনে জার্মানরা খেলতে শুরু করেছিলেন দ্রুতগতির আক্রমণাত্মক ফুটবল যা দেখতেও মন্দ তো নয়ই, বেশ সুন্দর। কার্যকারিতায় বিরাট জোর দিতে গিয়ে যে–সৌন্দর্যের দিকটায় আগে একেবারেই মন দিতে চায়নি জার্মান ফুটবল। ইকুয়েদরের বিরুদ্ধে বালাকের ডিফেন্সচেরা থ্রু ধরে ক্লোজের গোল তো ছবির মতোই। প্রসঙ্গত, বালাকের সঙ্গেও খানিকটা মন কষাকষি ছিল কোচের, অন্তত বিশ্বের প্রচারমাধ্যমে বেরিয়েছিল সে–খবর। প্রথম ম্যাচে খেলতেও পারেননি বালাক, নির্বাসিত থাকায়। কিন্তু, নিজেদের স্বার্থেই কোচ ও অধিনায়ক এই যুদ্ধে বিরতি এনেছিলেন বিশ্বকাপ চলাকালীন, লাভবান হয়েছিল জার্মান ফুটবল।
    ইংল্যান্ডের সমস্যা যথারীতি শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপের আগে থেকেই। আগের বিশ্বকাপে বেকহ্যামের পর এবারের বিশ্বকাপের আগে ওয়েন রুনির ভাঙা ‘মেটাটারসাল’! এরিকসনকে নিয়ে সে বার অবশ্য ইংল্যান্ডে বিরাট ঝামেলা চলছিল, বান্ধবীদের সঙ্গে এরিকসনের সম্পর্কের রোজনামচা ছাপা হচ্ছে নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড–এ। রুনিকে তবুও নিয়ে গিয়েছিলেন এরিকসন, সময়ের আগেই সেরেও উঠেছিলেন রুনি। কিন্তু, রুনি সেরে ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নতুন পাওয়া চোটে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল মাইকেল ওয়েনের, সুইডেনের বিরুদ্ধে হাঁটুতে চোট পেয়ে। ওয়েন পরে বলেছিলেন, ‘সুইডেনের বিরুদ্ধে চোট পাওয়ার পর হোটেলের ঘরে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া কাজ ছিল না। হাঁটুতে লাগানো আইসপ্যাক। যাদের ভালবাসা ছাড়া ফুটবলার হিসেবে কিছুই করতে পারতাম না, শুয়ে শুয়ে তাদের সবাইকে টেক্সট করতাম, ক্ষমা চেয়ে। এত খারাপ লাগছিল যে বলার নয়।’
    এরিকসনকে নিয়ে নানা সমস্যা ছিল যেমন, কোচের ভাবনা নিয়েও। উইঙ্গার হিসেবে বেকহ্যাম যে ব্যর্থ, তত দিনে প্রতিষ্ঠিত। শুধু ফ্রি কিক আর কিছু ক্রসই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু বেকহ্যামকে খেলাতে গিয়ে উঠতি অ্যারন লেননকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছিল, যা একেবারেই মনঃপূত ছিল না অনেকের, ব্রায়ান গ্ল্যানভিলের তো বটেই! ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর বিরুদ্ধে বেকহ্যামকে রাইট ব্যাক করে দিয়েছিলেন এরিকসন, লেননকে রাইট হাফ হিসেবে খেলাতে। ‘সোকা ওয়ারিয়র্স’ ০–২ হারলেও ইংল্যান্ডের দুটি গোলই এসেছিল শেষপর্বে। ত্রিনিদাদের ডাচ কোচ লিও বীনহ্যাকার ইংল্যান্ডের ফুটবল খেলার ধরন সম্পর্কে বলেছিলেন সেই কথাগুলোই, বহু যুগ ধরে বারবার যা বলে এসেছেন বহু বিশেষজ্ঞ, ‘They have to show a little more patience. Use the big guys by all means, but remember that it's not the only option. When they meet the better teams they will probably have to show more than they have done so far.’ কিন্তু, ইংরেজ ফুটবলের সমর্থকরা বুঝলে তো শুনবে!
    গ্রুপ সি–তে আর্জেন্তিনা, হল্যান্ড, আইভরি কোস্ট ও সার্বিয়া–মন্টেনিগ্রো। শেষ দুটি দেশের প্রথম বিশ্বকাপ সত্ত্বেও গ্রুপটিকে মৃত্যু–উপত্যকা বলার দিদিয়ের দ্রোগবাদের উপস্থিতি। এমানুয়েল এবো, কোলো ও ইয়াইয়া তুরে, সলোমন কালু, সেইদু কেইতা — সবাই–ই পরিচিত মোটামুটি। বয়সও কম, ধরে নেওয়া হয়েছিল আফ্রিকার ‘এলিফ্যান্টস’ বিশ্বকাপে দেখিয়ে দেবে বিশ্বকে। কিন্তু, বিশ্বকাপের আসরে এসেই দুই দৈত্যের মুখোমুখি হওয়ায় দ্রোগবারা শুরুই করেছিলেন প্রথম দুটি ম্যাচ ১–২ হেরে, বিদায় নিয়ে। শেষ ম্যাচে সার্বিয়াকে ৩–২ হারালেও তাই নকআউটে পৌঁছন সম্ভব হয়নি। আর, সার্বিয়া–মন্টেনিগ্রোর শেষোক্ত অংশ, মানে মন্টেনিগ্রো, বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিল। ফলে, পরেও আর কখনও সার্বিয়া–মন্টেনিগ্রো বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি। দুটি আলাদা দেশ এখন খেলে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে, সার্বিয়া এবং মন্টেনিগ্রো।
    আর্জেন্তিনা কিন্তু দুর্দান্ত ছন্দে ছিল শুরু থেকেই। হোসে পেকারমান দায়িত্বে। প্রাজ্ঞ কোচ, বহুদিন ছিলেন আর্জেন্তিনার যুব দলের দায়িত্বে। ১৯৯৪ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আর্জেন্তিনার অনূর্ধ্ব ২০ দলের দায়িত্বে থেকে তাঁর সাফল্য ঈর্ষণীয় সব মাপকাঠিতেই। ফিফা ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল আর্জেন্তিনা তিনবার — ১৯৯৫–তে কাতার, ১৯৯৭–তে মালয়েশিয়া এবং ২০০১–এ নিজেদের দেশে। কোন কোন ফুটবলার উঠে এসেছিলেন পেকারমানের হাত ধরে, তালিকা করলে মোটামুটি আর্জেন্তিনার শেষ ২০ বছরের সেরা দল হয়ে যাবে! হুয়ান পাবলো সোরিন, হুয়ান রোমান রিকেলমে, পাবলো আইমার, এস্তেবান কামবিয়াসো, ওয়ালতার সামুয়েল, দিয়েগো প্লাসেন্তে, লিয়ান্দ্রো কুফ্রে, হাভিয়ের সাভিওলা, মাক্সি রদরিগেজ, নিকোলাস বুরদিসো। ২০০৪–এ সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাছাইপর্ব পেরিয়ে আর্জেন্তিনার মূলপর্বে পৌঁছতে বিশেষ সমস্যাও হয়নি। জার্মানি যাওয়ার আগে লিওনেল মেসিকে দলে রাখা হবে কিনা, জোর আলোচনা। প্রায় মারাদোনার ১৯৭৮ বিশ্বকাপের আগের মতোই ব্যাপার। মেসির পক্ষে গিয়েছিল ঠিক সময়ে চোট সারিয়ে আবার মাঠে ফেরা। যদিও বার্সেলোনা সেবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেও পারি–‌তে আর্সেনালের বিরুদ্ধে ফাইনালে মাঠে নামেননি ১৮–বছরের মেসি, দেশের মিডিয়ার চাপ এবং বার্সেলোনায় মেসির তখনকার পারফরম্যান্স বাধ্যই করেছিল পেকারমানকে, বিশ্বকাপের দলে রাখতে। প্রাথমিক পর্বে প্রথম খেলায় আইভরি কোস্টের বিরুদ্ধে নামাননি মেসিকে। আলস্যে–ভরা ফুটবল–বুদ্ধিমত্তার শেষ কথা গোমড়ামুখো–রিকেলমে তাঁর দলের কেন্দ্রবিন্দু, ঠিক যেমন বিলার্দোর ছিলেন মারাদোনা, বা মেনোত্তির পাসারেয়া। প্রথম ম্যাচে দুটি গোলের পেছনেই রিকেলমে। প্রথমে তাঁর ফ্রি কিক থেকে ক্রেসপো, পরে রক্ষণ চিরে–দেওয়া থ্রু ধরে সাভিওলার গোল। সার্বিয়া–মন্টেনিগ্রোর বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনা তো যেন যুব বিশ্বকাপে পেকারমানের দলের মতো। ২৪–পাসের এক অনবদ্য মুভ শেষ হয়েছিল কামবিয়াসোর গোলে। ৫৯ মিনিটে কার্লোস তেভেজ আর ৭৫ মিনিটে মেসি মাঠে এসে দুজনেই নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন গোলের খাতায়। ৬–০ জয়, স্রেফ ধুলো উড়িয়ে! শেষ ম্যাচে মেসি ৭০ মিনিট এবং তেভেজ পুরো সময় মাঠে থাকলেও হল্যান্ডের বিরুদ্ধে বেশি ঝুঁকি নিতে চাননি পেকারমান, লক্ষ্য তখন নকআউট। হল্যান্ডও, প্রত্যাশামতোই, দ্বিতীয় পর্বে পৌঁছেছিল সার্বিয়াকে ১–০ ও আইভরি কোস্টকে ২–১ হারিয়ে, তিন গোলদাতা যথাক্রমে রবেন, ফন পার্সি ও নিস্টেলরুই। আর্জেন্তিনা–হল্যান্ড ০–০, কোচ মার্কো ফন বাস্তেন সন্তুষ্ট, ফন পার্সি, রবেনদের ঝামেলা মোটামুটি সামলাতে পেরেই।

    বিগ ফিল স্কোলারি ব্রাজিল থেকে চলে এসেছিলেন পর্তুগালে। দেকো–কে নিয়ে ঝামেলা লেগে গিয়েছিল ফিগোর সঙ্গে। ব্রাজিলীয় দেকো পর্তুগালে খেলতেন বলে স্কোলারি তাঁকে পর্তুগালের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় দলে নিয়েছিলেন, যা মনঃপূত হয়নি অধিনায়ক ফিগোর। পরিষ্কার বলেছিলেন, যে সব ফুটবলাররা নিজ নিজ দেশের জাতীয় দলে জায়গা পাবে না ভেবে অন্য দেশের হয়ে খেলতে চলে আসে তাদের জন্য কোনও রকম সহানুভূতি নেই তাঁর মনে। এর পেছনে অনেকেই তখন দেখেছিলেন রেয়াল–বার্সেলোনা দ্বন্দ্বের প্রভাব। বার্সেলোনায় শুরু করে রেয়ালে যোগ দিয়েছিলেন ফিগো, বার্সেলোনা তাঁকে আখ্যা দিয়েছিল বিশ্বাসঘাতক। আর দেকো তখন বার্সেলোনার অন্যতম তারকা, রোনালদিনিওর পরেই। স্কোলারি কিন্তু শক্ত হাতেই সামলেছিলেন বিতর্ক। আর গ্রুপে তিনটি ম্যাচই জিতে সেই ১৯৬৬–র পর প্রথম বার পর্তুগাল গিয়েছিল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে। ২০০২–তে সাত ম্যাচের পর, ২০০৬–এর গ্রুপে তিনটি — মোট ১০ ম্যাচ টানা জিতে স্কোলারি রেকর্ড করতে চলেছেন বিশ্বকাপে। ক্রিস্তিয়ানোর একটিই গোল ছিল, ইরানের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে। মেহিকোর কোচ রিকার্দো লাভোলপে–কে ফিফা বিশেষভাবে সতর্কিত করেছিল, রিজার্ভ বেঞ্চে বসে সিগারেট ধরানোয়। যদিও তাতে দ্বিতীয় পর্বে যাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়নি মার্কেজ, বোরগেত্তি, ফ্রাঙ্কোদের।
    ইতালিতে যথারীতি সমস্যা ম্যাচ–গড়াপেটা নিয়ে। এবার নাম ‘কালসিওপোলি’। আমেরিকায় ‘ওয়াটারগেট’ কেলেঙ্কারির পর থেকে ইংরেজিতে যেমন বিশেষ একটি শব্দের শেষে ‘গেট’ জুড়ে কেলেঙ্কারি বোঝানো হয়, ইতালীয় ভাষায় তেমনই করা হয় ‘পোলি’ জুড়ে। জুভেন্তাসের তখনকার জেনারেল ম্যানেজার লুসিয়ানো মোগ্গির সঙ্গে জুড়ে কেউ কেউ এই কেলেঙ্কারিকে ‘মোগ্গিপোলি’–ও বলে থাকেন। আর, ২০০৬–এর বিশ্বকাপে ইতালি দলে ছিল জুভেন্তাসের ফুটবলারদের ভিড় — অধিনায়ক কানাভারো, গোলরক্ষক বুফোঁ, দেল পিয়েরো, কামোরানেসি, জামব্রোতা। কোচ মার্সেলো লিপ্পি অবশ্য এতশত ভাবতে রাজি ছিলেন না। বলেই দিয়েছিলেন, ‘বাড়ি ফিরে ওসব নিয়ে ভাবা যাবে। এখন জার্মানিতে, ভাবনায় একমাত্র বিশ্বকাপই।’ ফলে, আমেরিকার সঙ্গে ড্র এবং সেই ম্যাচেই ব্রায়ান ম্যাকব্রাইডকে কনুই মারার অপরাধে চার ম্যাচের জন্য দানিয়েল দে রোসি নির্বাসিত হলেও, গ্রুপে ৩ ম্যাচ থেকে ৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে সমস্যা হয়নি। চমকে দিয়েছিল ঘানা, অভিষেকেই। শরীর–সর্বস্বতা ছিল, ফুটবলে থাকবেও। কিন্তু, মুন্তারি–এসিয়েন–গিয়ান–কুফুর–আপিয়াদের লড়াই ভাল লেগেছিল সব দর্শকেরই। ইতালির কাছে হেরে চেক প্রজাতন্ত্র ও আমেরিকাকে হারিয়ে তাদের দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ায় আফ্রিকা গেয়েছিল জয়গান। নিরাশ করেছিল চেক প্রজাতন্ত্র। গোলে চেক, জুভেন্তাস–কিংবদন্তি নেদভেদ, পোবোরোস্কি, রসিকি, মিলান বারোস, প্লাসিল, কোলার — ২০০৪ ইউরোয় তাঁদের খেলা দিয়েই যাঁরা মুগ্ধতা বাড়িয়েছিলেন সাবেক চেকোস্লোভাকিয়ার ছোট–ছোট পাসের দুরন্ত গতির ফুটবলে, বিশ্বকাপে একযোগে ব্যর্থ তাঁরা সবাই–ই।
    ব্রাজিল পৌঁছেছিল ফেবারিট তকমা ঘাড়ে নিয়ে, ‘হেক্সা’ বা ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জিততে। কিন্তু, সেরা তারকা রোনালদিনিও বার্সেলোনাকে লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় পৌঁছেছিলেন বিশ্বকাপে, শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে। বার্সেলোনা তখনও পেপ গারদিওলার নয়। মেসি–জাভি–ইনিয়েস্তা ত্রিভুজ ২০০৯–এ যতটা শক্তিশালী তার ছিটেফোঁটাও ছিল না ২০০৬–এ। ফলে রাইকার্ডের একমাত্র ভরসা ছিলেন রোনালদিনিও, সঙ্গে দেকো–এটোও। রোনালদিনিওর সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের কোচ কার্লোস আলবের্তো পেরিরা। বার্সেলোনায় রোনালদিনিও অভ্যস্ত ছিলেন মাঝমাঠের বাঁদিকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় খেলতে। যে কোনও দিকে যখন খুশি যাওয়ার স্বাধীনতা তাঁকে দিয়েছিলেন রাইকার্ড। পেরিরা ব্রাজিলকে ফেরাতে চেয়েছিলেন ১৯৯৪–র কার্যকরী দলে। রোনালদিনিওর ভূমিকা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, অনেকটাই নিচে নেমে রক্ষণকে সাহায্য করার কাজে। ফলে, ব্রাজিল হারিয়েছিল ধার। রোনালদো বিশ্বকাপের আগে দু’মাস কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেননি। ২০০২ চার বছর আগের অতীত। বেশ মোটা শরীর, শ্লথ। আদ্রিয়ানো, রোবিনিও — কাউকেই বাদ দেননি পেরিরা। হাজির হয়েছিলেন সবাইকে নিয়েই, কিন্তু গণ্ডগোল ছিল ভাবনায়। ফলে, তিনটি ম্যাচ জিতেই এবং ক্রোয়েশিয়া বাদ দিয়ে বাকি দু’ম্যাচ যথেষ্ট বড় ব্যবধানে জিতলেও, ব্রাজিলের খেলায় সন্তুষ্ট ছিলেন না কেউই, পেরিরা ছাড়া, যিনি মনে করেছিলেন, ‘প্রতিযোগিতায় অনেক দূর যাওয়ার লক্ষ্য থাকলে শুরুতেই সেরা ছন্দে থাকলে চলবে না। নিজেদের ৭০–৮০ শতাংশ খেলতে পারলেই হবে এবং ব্রাজিল সেটাই করেছে!’ অস্ট্রেলিয়া ৩২ বছর পর বিশ্বকাপে আবার পৌঁছেই দ্বিতীয় রাউন্ডে। কোচের নাম? গাস হিডিঙ্ক, গত দুটি বিশ্বকাপে যথাক্রমে হল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে সেমিফাইনালে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম নায়ক। ভিডুকা–কেওয়েল–ক্যাহিল ছিলেন, হিডিঙ্কের দর্শনও। তাই ব্রাজিলের কাছে হারলেও জাপানকে হারিয়ে আর ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ড্র করে প্রথমবার দ্বিতীয় পর্বে। তবে, ক্রোয়েশিয়া–অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ইংরেজ রেফারি গ্রাহাম পোল যা করেছিলেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসে বেনজির। জোসিপ সিমুনিচকে তিনবার হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন তিনি!
    ফ্রান্স ২০০৪ ইউরোয় হেরে যাওয়ার পর সাজঘরে বিরাট সমস্যা দেখা দিয়েছিল। অঁরি–ভিয়েরারা পরিষ্কার দাবি তুলেছিলেন আর্সেনালের মতো তাঁদেরকে কেন্দ্র করেই খেলার, জিদান–কেন্দ্রিক খেলা থেকে বেরিয়ে এসে। জিদান বুঝতে পেরে সরে দাঁড়িয়েছিলেন জাতীয় দল থেকে, অভিমানেই। সমস্যা হল, ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতার ক্ষেত্রে হয়ত সত্যিই বিরাট ভূমিকা ছিল না জিদানের ফাইনাল ছাড়া, কিন্তু, ২০০২ বিশ্বকাপেই তাঁকে ছাড়া খেলতে গিয়ে বিশ্বজয়ীরা মুখ থুবড়ে পড়েছিল প্রথম পর্বেই। একটিও গোল করতে না পেরে লজ্জাজনক বিদায় নিতে হয়েছিল অঁরি–ভিয়েরারা প্রথম থেকেই খেলা সত্ত্বেও। জিদানকে ছাড়া ২০০৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে গিয়ে আবার একই অবস্থায় পড়েছিল ফ্রান্স। তিন ম্যাচ বাকি থাকতে গ্রুপে ছিল চতুর্থস্থানে। বিশ্বকাপে নিয়ে যেতেই হিমসিম অঁরিরা মুখ লুকোচ্ছেন, আসরে বাধ্য হয়েই নামতে হয় কোচ দমেনেখকে। ফিরিয়ে আনতে হয় জিদানকে, ফিরিয়ে দিতে হয় অধিনায়কের আর্মব্যান্ড। শেষ তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট এনে জিদানের ফ্রান্স এবার গ্রুপ শীর্ষে থেকেই বিশ্বকাপে পৌঁছয়।
    কিন্তু, বিশ্বকাপের সময় আবার ঝামেলা। প্রথম দু–ম্যাচেই ড্র এবং দুটি ম্যাচে দুবার হলুদ কার্ড দেখে জিদান তৃতীয় ম্যাচে মাঠের বাইরে। অথচ, তৃতীয় ম্যাচে টোগোকে অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে হারাতেই হবে। তীব্র সমালোচিত হচ্ছিলেন কোচ দমেনেখ। সঙ্গে অঁরিও, বড় আসরে আবারও ব্যর্থ হওয়ায়। এমনকি, ‘বুড়ো’ জিদানকে দলে নেওয়ার জন্যও সমালোচিত হতে হচ্ছিল দমেনেখকে। তৃতীয় ম্যাচে জিদান নেই, ত্রেজেগুয়ে এলেন, ফ্রান্স ভিয়েরা আর অঁরির গোলে পৌঁছল দ্বিতীয় পর্বে, কোনও রকমে। সুইটজারল্যান্ড গেল গ্রুপ শীর্ষে থেকে। গ্রুপ এইচ থেকে স্পেন, হাসতে হাসতেই তিনটি ম্যাচ জিতে। ভিয়া, তোরেস এসে গিয়েছেন, রাউল তখনও দলের মধ্যমণি, মার্কোস সেনা–জাবি আলোন্সো–জাভির মাঝমাঠ, পরিবর্ত হিসেবে লুইস গার্সিয়া, ইনিয়েস্তা, ফাব্রেগাসরা আসছেন দলে, কোচ আরাগোনেস বেশ খুশি, ছোট ছোট চেহারার ফুটবলারদের পেয়েই, সাফল্যে যাঁরা বড় কিছুর স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন। ‘আমাদের দলে বিরাট চেহারার ফুটবলার নেই। তাই আমরা আমাদের শক্তির ওপরই নির্ভরশীল। রাউলকে দেখেছেন? দুরন্ত গতি আর টেকনিক। সম্পদ আমাদের।’
    নকআউট
    দ্বিতীয় পর্বে অঘটন বলতে তেমন কিছু নেই। জার্মানি, আর্জেন্তিনা, ইংল্যান্ড, শেভচেঙ্কোর ইউক্রেন (‌সুইটজারল্যান্ডকে হারিয়ে, টাইব্রেকারে)‌ পৌঁছেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে, প্রত্যাশামতোই। বাকি চারটি ম্যাচ নিয়ে বিতর্ক। প্রথমে ইতালি–অস্ট্রেলিয়া। হিডিঙ্কের দলকে বের করে দেওয়া হয়েছিল বলাই ঠিক। স্পেনের রেফারি লুইস মেদিনা কান্তালেইও–র মনে হয়েছিল ফাবিও গ্রোসোকে ফাউল করা হয়েছে বক্সে, করেছেন সকারুদের লুকাস নিল। ৯০ মিনিট পেরিয়ে খেলা তখন ইনজুরি টাইম–এ। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত, তোত্তির গোল, ইতালি প্রথম আটে, সকারুদের কান্না। মার্কো মাতেরাজ্জি লাল কার্ড দেখার পর অস্ট্রেলিয়ারই দাপট ছিল খেলায়। কোচ হিডিঙ্ক অবশ্য এভাবে হেরেও মর্যাদা হারাননি। বলেছিলেন, ‘হেরে হতাশ, স্বাভাবিক। আরও বেশি হতাশ কারণ গোলটা খেতে হল একেবারে শেষ মুহূর্তে। তবে, গোটা প্রতিযোগিতায় যেভাবে খেলেছে ছেলেরা, গর্বিত।’ আর ফুটবলার স্কট চিপারফিল্ড রাখঢাক করেননি, ‘ওঁরা বিশ্বকাপে বড় বড় দেশগুলোকেই দেখেন। বড় দেশগুলোকেই চান সেমিফাইনালে, ফাইনালে, কাজও করেন সেই দিকে তাকিয়েই।’ (‌ওয়ার্ল্ড সকার, জুলাই ২০০৬ সংখ্যা)‌
    ব্রাজিল ৩–০ জিতেছিল ঘানার বিরুদ্ধে, কিন্তু, ফলাফল ম্যাচের যথার্থ ছবি দেখাচ্ছে না! মাইকেল এসিয়েন খেলতে পারেননি কার্ড–সমস্যায়, তবুও ব্রাজিলের মাঝমাঠ ফুল ফোটানো দূরের কথা, থই পায়নি প্রায়ই, ঘানার শারীরিক ফুটবলের বিপক্ষে। স্ট্রাইকাররা বিশেষত গিয়ান একাই যদি প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারতেন, ফল অন্য রকমও হতে পারত। রোনালদোকে নিয়ে বহু কথার মাঝেই ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে বিশ্বকাপে নিজের ১৫–তম গোল করে জার্ড মুলারকে পেরিয়ে যান ব্রাজিলীয় তারকা, যে–‌রেকর্ড আরেক জার্মান মিরোস্লাভ ক্লোজে ভেঙে দেবেন ২০১৪ বিশ্বকাপে।
    স্পেন দুর্দান্ত খেললেও জিদান ফিরলেন ফ্রান্সে এবং দেখিয়ে দিলেন, কেন তাঁকে নিয়ে বিশ্ব উত্তাল। মার্কা, স্পেনের দৈনিক লিখেছিল, ‘জিদানকে রিটায়ার করাবে স্পেন’। জিদানই ‘রিটায়ার’ করিয়ে দিয়েছিলেন স্পেনীয়দের! ৩–১ জয়ী ফ্রান্স, নিজে একটি গোল করেছিলেন, করিয়েছিলেন আরও একটি। রেয়ালে খেলতেন, সেই ক্লাবের দেশের বিরুদ্ধেই ফিরলেন ছন্দে। কোচ দমেনেখের মতে, ‘কমবয়সি ফুটবলাররা তাড়াতাড়ি সর্বস্ব দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বয়স্করা কিন্তু জানে কীভাবে ধৈর্য় ধরতে হয়।’
    দ্বিতীয় পর্বে কুখ্যাত ম্যাচ পর্তুগাল–হল্যান্ড। নুরেমবার্গের ম্যাচ সেই ১৯৫৪ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরি–ব্রাজিলের চেয়েও বেশি কুখ্যাত হয়ে ওঠে রুশ রেফারি ভ্যালেন্টিন ইভানভ ১৬বার হলুদ কার্ড দেখাতে বাধ্য হন, ৪ জনকে লাল কার্ডও, দু’বার করে হলুদ কার্ড দেখানোয়। ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটার বলেছিলেন, রেফারিকেই নাকি হলুদ কার্ড দেখানো উচিত ছিল! ডাচ কোচ ফন বাস্তেনের মতে, রেফারির কোনও নিয়ন্ত্রণই ছিল না ম্যাচে। হল্যান্ডের হয়ে কার্ড দেখেছিলেন — ফন বমেল, বুলারুজ (‌২, লাল)‌, ব্রঙ্কহর্স্ট (‌২, লাল)‌, স্নেইডার, ফন ডার ভার্ট। আর পর্তুগালের হয়ে — মানিশ, কোস্তিনা (‌২, লাল)‌, পেতি, ফিগো, দেকো (‌২, লাল)‌, রিকার্দো, নুনো ভালেন্তে। জঘন্য ম্যাচ যেখানে ফুটবলের চেয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছিল লাথালাথি আর মারামারিই। আর, ২ মিনিটেই ফন বমেল জঘন্য ফাউল করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ম্যাচ কোন দিকে গড়াচ্ছে। ওয়ার্ল্ড সকার–এ রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়মিত লেখেন পল গার্ডনার। ওই ম্যাচ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য মনে রাখার মতোই। ‘রেফারি কী করতে পারতেন? কী অস্ত্রই বা ছিল হাতে? ওই তো দুটো কার্ড! যার একটা তিনি ১৬ বার বের করেছিলেন এবং বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর রেফারিদের সভায় ওই ম্যাচের রেকর্ডিং দেখিয়ে জানানো হয়েছিল, প্রতিবার হলুদ কার্ড দেখানোর সিদ্ধান্ত ছিল ঠিক। তা হলে, রেফারিকে হলুদ কার্ড দেখানোর প্রশ্ন ওঠে কী করে? যে পেশাদাররা বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে নিজেদের মেজাজ ধরে রাখতে না–পেরে খেলাটার সর্বনাশ করেন, যে–ম্যানেজাররা সে ভাবে খেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন, হলুদ কার্ড কি আসলে তাঁদেরই প্রাপ্য নয়?’
    কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্তিনা–জার্মানি ম্যাচের শেষে একই রকম জঘন্য মারামারির দৃশ্য। ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১–১, আয়ালার গোল ৮০ মিনিটে ক্লোজে শোধ করেছিলেন। তারপর টাইব্রেকার এবং আর্জেন্তিনার বিদায় আয়ালা ও কামবিয়াসো টাইব্রেকারে মিস করায়। মেসিকে নামাননি পেকারমান, রিকেলমে এই ম্যাচে একেবারেই ছন্দহীন, তুলে নিতে হয়েছিল ৭২ মিনিটে। টাইব্রেকার সম্পর্কে ক্লিন্সম্যান বলেছিলেন, ‘যেন হিচককের ছবি!’ আর, কামবিয়াসোকে বক্সে ফাউল করেছিলেন লাম, পেনাল্টির বদলে কামবিয়াসোকেই কার্ড দেখানো হয়েছিল ‘ডাইভিং’–এর অপরাধে। ফ্রিঞ্জ, মাঠে রিকেলমে–কে ছন্দহীন করে দেওয়ার নায়ক, ম্যাচ শেষে উত্তেজিত হয়ে ঘুষি মেরেছিলেন আর্জেন্তিনার হুলিও ক্রুজের মুখে। ফলে, নির্বাসিত হন সেমিফাইনাল থেকে। কুফ্রে তো রিজার্ভ বেঞ্চ থেকেই লাল কার্ড দেখেন! আজুরিদের সমস্যা হয়নি শেভচেঙ্কোর ইউক্রেনকে ৩–০ হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছতে। লুকা টোনির জোড়া গোল, অবশেষে! ইংল্যান্ড–পর্তুগাল ০–০, টাইব্রেকারে জয়ী পর্তুগাল। ল্যাম্পার্ড, এই ম্যাচের আগে বা পরে যিনি বহু পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন ও করবেন, এই ম্যাচে ব্যর্থ প্রথমেই। একই অবস্থা জেরার্ড ও ক্যারাঘারের। ক্রিস্তিয়ানোর পেনাল্টিতে ৩–১ ও জয়। ওয়েন রুনি, দৃশ্যতই হতাশ, রিকার্দো কার্ভালিওর পায়ের ওপর বাঁ–পা দিয়ে আঘাত করেছিলেন আর্জেন্তিনীয় রেফারি ওরাসিও এলিজোন্দোর একেবারে নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে। লাল কার্ড দেখাতে এক মুহূর্তও সময় নেননি। ইংল্যান্ড অবশ্য খুঁজে পেয়ে গিয়েছিল হারের অজুহাত যখন লাল কার্ড দেখানোর পর ক্রিস্তিয়ানো নিজেদের বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট করে ইঙ্গিত করেছিলেন, তখনই! পরে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তাঁকে খেলতে দেওয়া হবে কিনা, বা খেলতে দেওয়া উচিত কিনা নিয়ে ভোটাভুটিও শুরু হয়েছিল গণমাধ্যমে। ভাবখানা এমন যেন, রুনি কোনও দোষই করেননি, কার্ভালিওকে লাথিটা মেরেছিলেন আসলে ক্রিস্তিয়ানোই, দোষটা চাপিয়ে দেন রুনির ঘাড়ে!
    চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে বাড়ি পাঠায় আবার জিদানের ফ্রান্স। ছন্নছাড়া, ক্লান্ত, অবসন্ন ছিল ব্রাজিল, যার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল গোলের সময়ও। জিদানের ফ্রি কিক থেকে অঁরি যখন গোলে শট করতে যাচ্ছিলেন, রোবের্তো কার্লোস কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে! আটানব্বই থেকেই এমন ভুল তিনি অনেকবার করে এসেছেন, এবার তা বিদায়ের প্রত্যক্ষ কারণ চ্যাম্পিয়নদের। পেলে বলেছিলেন ব্রাজিলের বিদায় সম্পর্কে, ‘নিশ্চিত ফেবারিট ধরা হয়েছিল ব্রাজিলকে, কিন্তু কী কারণে এতটা নিশ্চিত ছিলেন সবাই, আমি বুঝিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও কিছুই বিপক্ষে যায়নি যে দলের, মানসিকতার পরীক্ষা হয়েছিল বলা যায়। আর, ব্রাজিল তো ভুলে গিয়েছিল ইতিহাসের শিক্ষাই। ১৯৫৮ সালে আমরা ফ্রান্সকে সেমিফাইনালে হারিয়েছিলাম ৫–২। তারপর থেকে বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ব্রাজিল কিন্তু জেতেনি আর। ছিয়াশিতে প্লাতিনিদের বিরুদ্ধে হার টাইব্রেকারে, আটানব্বইতে ফাইনালে জিদানের ফ্রান্সের কাছেও হার সরাসরি। এই দুটো হারের বদলা নেওয়ার জন্য ব্রাজিলের উচিত ছিল এগিয়ে যাওয়া, আক্রমণ করা। ম্যাচে দেখা গেল, প্রথম ২০ মিনিটের পর ওই কাজগুলো করল শুধু ফ্রান্সই! জিদান দুর্দান্ত। সর্বত্র দেখছিলাম ওকেই। বল চেয়ে নিচ্ছিল, খেলাচ্ছিল দলকে, নিয়ন্ত্রণ করছিল। এই স্পিরিটটা রোনালদোর কাছেও দেখতে চেয়েছিলাম, পাইনি। রোনালদিনিওর থেকেও নয়। গোটা প্রতিযোগিতাতেই তো বেশ হতাশ করেছিল রোনালদিনিও। তাই, অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই ব্রাজিলের।’ জিদান ক্রমশ মহীরুহ হওয়ার পথে তখন, নকআউটে পরপর দুটি ম্যাচে নায়ক হয়ে।
    সেমিফাইনাল, ফাইনাল
    গ্রোসোর গোল ১১৯ মিনিটে, দেল পিয়েরোর ১২০। আয়োজক জার্মানির দৌড় শেষ, ফাইনালে ইতালি আবার। দেশে ফুটবল–কেলেঙ্কারি হলে বিশ্বকাপে ইতালির পারফরম্যান্স দুর্দান্ত হয়, বিরাশির পর আবারও প্রমাণ। আন্দ্রে পিরলো, ‘রেজিস্তা’ হয়ে শুষে নিলেন জার্মান আক্রমণের বারুদ, নিজের পাসিংয়ে ইতালিকে সরবরাহ করলেন আগুন। ডর্টমুন্ডে শেষ ক্লিন্সম্যান–অভিযান, কিন্তু, মাথা উঁচু করে, ভাল খেলে, নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে, ছলচাতুরির আশ্রয় না–নিয়ে। ক্লিন্সম্যান ঠিকই বলেছিলেন, ‘দুরন্ত গতির আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে জার্মানি। এটাই তো সাফল্য আমাদের। বিশ্বকে জার্মান ফুটবলের নতুন মুখ দেখিয়েছি।’
    অন্য সেমিফাইনালে ছিল দুই বন্ধু–র লড়াই। আর জিদান দেখা গেল, বন্ধুদের লড়াইতে বারবারই, জয়ী! আগে দুবার হারিয়েছিলেন রোনালদোকে, এবার পালা ফিগোর। ২০০০ ইউরো জয়ের সময়ও সেমিফাইনালে জিদানের (‌সোনালি)‌ পেনাল্টিতে জিতেছিল ফ্রান্স, এবার ফাইনালে উঠল ৩৩ মিনিটের পেনাল্টিতে, সেই জিদানেরই। যদিও পেনাল্টির সিদ্ধান্ত এবং অঁরির হুড়মুড়িয়ে পড়ে–যাওয়া নিয়ে প্রচুর কথা। আর পেনাল্টিতে গোল করে জিদান সোজা ফিরে এসেছিলেন নিজেদের অর্ধে, ‘সেলিব্রেশন’ করেছিলেন ক্লদ ম্যাকেলেলে আর থুরঁ–র সঙ্গে, যে–তিন ‘বুড়ো’–কে আন্তর্জাতিক স্তরে অবসর ভেঙে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল! ম্যাচ শেষে জিদান–ফিগোর জার্সিবদল অনবদ্য দৃশ্য। ফিগোরা তৃতীয় স্থানের ম্যাচে আয়োজকদের কাছে হেরে যান ১–৩।

    ফাইনালের শুরুতেই উত্তেজনা। জামব্রোতা হলুদ কার্ড দেখলেন ৫ মিনিটে, ৭ মিনিটে পেনাল্টি! মালুদা এগোচ্ছিলেন, মাতেরাজ্জির কোনও প্রয়োজন ছিল না ওভাবে পা বাড়ানোর, মালুদাকে যা সাহায্য করেছিল পড়ে যেতে! জিদান আবার এগোলেন পেনাল্টি নিতে। এবার চিপ করে দিলেন আলতো। কিন্তু, বলটা বারের তলায় লেগে গোললাইনের ভেতরে ড্রপ খেয়ে বাইরে আসা মাত্র বুকে তুলে নিয়েছিলেন বুফোঁ। রেফারির দৃষ্টি এড়ায়নি। মাতেরাজ্জি আবার নিজের ভুল শুধরে নিয়েছিলেন ১৯ মিনিটে। পিরলোর কর্নারে সব মাথা ছাড়িয়ে উঠে হেড দিয়ে। দু–তরফেই আক্রমণ চলেছিল তারপর। লুকা টোনির হেড বাইরে যাওয়া, আর অতিরিক্ত সময়ে জিদানের অসাধারণ হেড বুফোঁর অনন্যসাধারণ ‘সেভ’। ওই হতাশা থেকেই কি কয়েক মিনিট পরের ঢুঁসো জিদানের, মাতেরাজ্জির বুকে? লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়া ১১০ মিনিটে, আর টাইব্রেকারে হার ফ্রান্সের। দমেনেখের কথায়, ‘জিদানের লাল কার্ড খেলাটাকেই মেরে ফেলল। বিশেষত অতিরিক্ত সময় যখন ইতালি নিশ্চিতভাবেই চাইছিল টাইব্রেকার। ওর মতো গ্রেট ফুটবলারের এভাবে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া দুঃখের। দুর্দান্ত বিশ্বকাপ ওর... এমন তো কতবারই হয় যখন মার খেতে হয়... অজুহাত দিচ্ছি না, বুঝতে পারছি কতটা খারাপ লাগছে ওরও। তবে, একেবারেই অনভিপ্রেত, খুব খারাপ দৃষ্টান্ত।’ উল্টোদিকে, আবারও ফুটবল–কেলেঙ্কারির বছরে কেলেঙ্কারিতে যুক্ত–থাকা ক্লাবের অধিনায়কের হাতেই বিশ্বকাপ, ফাবিও কানাভারো!
    পোস্ট স্ক্রিপ্ট
    ফাইনালের দিন দুয়েক পর এক ফরাসি কাগজের প্রশ্ন ছিল, ‘জিনেদিন জিদান, আপনার সন্তানের সামনে মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবেন তো আপনি?’
    সেদিনও বুঝিনি, এখনও বুঝি না, কেন দাঁড়াতে পারবেন না জিদান, তাঁর সন্তানের সামনে মুখ তুলে, কী অপরাধে?‌
    জিদান কি কোনও অপরাধ করেছিলেন? কোনও এক মার্কো মাতেরাজ্জি প্রথমে তাঁর স্ত্রী, পরে তাঁর বোনকে অপমানের পর, শেষে তাঁর সেই সকালে হাসপাতালে ভর্তি–হওয়া মা–কে বলেছিলেন ‘টেররিস্ট হোর’। তাঁর বুকে ঢুঁসো না–মারলে আর কী করতেন জিদান?
    সহজ কথা, যে–কোনও কারণেই হোক, কেউ আপনার তিন ভালবাসার পাত্রী সম্পর্কে এইভাবে চরম অশ্লীল ইঙ্গিত ক্রমাগত করে গেলে কী করতেন আপনি?
    বরঞ্চ, পাল্টা প্রশ্ন থাক ছাপার অক্ষরেই, নিজের সন্তান বড় হওয়ার পর তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারবেন কি মাতেরাজ্জি, বলতে পারবেন কি কীভাবে এসেছিল তাঁর বিশ্বজয়ের কাপ, যা নিয়ে বুকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলেন, সস্নেহ চুম্বন এঁকে দিয়েছিলেন যার গায়ে বিশ্বজয়ের মুহূর্তে? তাঁর সন্তান তাঁকে প্রশ্ন করলে কী জবাব থাকবে মাতেরাজ্জির কাছে তখন? কিংবা, তাঁদের মা–কে কেউ ‘টেররিস্ট হোর’ বললে বাবাকে ছেড়ে জিদান–পন্থী হয়ে সেই বক্তার টুটি টিপে ধরার ইচ্ছে যদি সেই সন্তানের না–জাগে, সন্তান কেন?
    ফুটবল খেলেন বা কোনও খেলা খেলেন বলেই নাকি আপনি অ–মানবিক! বলা হবে, ‘এ তো স্ট্র‌্যাটেজি, কৌশল। ফাঁদ–পাতা, যাতে আপনি ফাঁদে পা দিয়ে ভুল করেন, বিপক্ষ জেতে। এ নিয়ে এত তত্ত্বকথা কীসের?’
    না, না এবং না।
    খেলছেন বলেই যে কোনও বিপক্ষের মৌখিক অধিকার থাকবে আপনার প্রিয়তমার ‘জার্সি খুলে নেওয়ার’, এই অধিকার কেউ কাউকে দেয়নি। খেলা পার্থিব সমাজ–বহির্ভূত, মঙ্গল গ্রহের কোনও বস্তু নয়। খেলার আইনও সভ্যতার পরিপন্থী হতে পারে না বা সভ্যতার সীমারেখা লঙ্ঘনের অধিকার পেতে পারে না যেমন, কোনও অদক্ষতার পরিপূরকও হয়ে উঠতে পারে না কখনও। মানবিক স্বতঃস্ফূর্ততার স্বাভাবিক প্রকাশ খেলার মাঠে। নিবিড় অনুশীলনে সেই দক্ষতা নিপুণতর করে তোলার বাহ্যিক মাধ্যম খেলা। সেখানে এই সভ্যজগত বহির্ভূত অনাচার কেন? কেন অক্লেশে কেউ কাউকে ক্রমশ যা–ইচ্ছে–তাই বলেই চলবেন আর অন্যপক্ষকে শুনে যেতেই হবে, দক্ষতার হিসেবে এগিয়ে থাকার ‘অপরাধে’?
    ‘কিন্তু, খেলার মাঠে অমন তো হামেশাই হয়!’
    যেন হামেশা যা হয়, সব ভাল! তা হলে গ্যালিলিওকে অন্ধ হতে হবে কেন, সত্য বিশ্বের চোখের সামনে আনার জন্য? বিশ্ব তো তেমনই জানত, সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে!
    ‘খেলতে এসেছিস, বাচ্চা না মেয়ে? পুরুষালি খেলা, লাথি–কনুই খেতে হবে, গালাগাল খেতে হবে, পারলে ফিরিয়েও দিতে হবে, তবেই না! খেলতে এসে গালাগাল শুনবি না, এই মেয়েলি কান্নাকাটির কোনও মানে হয়?’
    যেন গালাগাল পৌরুষের প্রতীক!
    নিজের সীমাবদ্ধতা ঢাকতে আর কত নীচে নামব আমরা? চুরি করব, আইন দেখতে পায়নি বলে ফাঁক খুঁজব, খেলোয়াড়ের জন্ম–বর্ণ নিয়ে প্রশ্ন তুলব, তুলতেই থাকব, থুথু ছেটাব, অভিনয় করব, যাকে দেখতে পারি না, চলন বেঁকা বলে অভিযোগ আনব, আর, বলে যাব ‘স্ট্র‌্যাটেজি’ — শত ধিক এমন মাতেরাজ্জি–পৌরুষে!
    (‌আগামিকাল ২০১০ বিশ্বকাপ)‌

    No comments